মামলার এজাহারে নেই নাম, এর আগে কোথাও কোনো অভিযোগেও নামগন্ধ ছিল না, কিন্তু হঠাৎ করে একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হলো ভোরের পাতা ও পিপলস টাইমসের সম্পাদক ড. কাজী এরতেজা হাসানকে। ‘ভূমিদস্যুখ্যাত’ আশিয়ান সিটির একটি ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় বুধবার তাকে একদিনের রিমান্ডেও নেওয়া হলো। আদালতে বিচারকের সামনে দাঁড়িয়ে আইনজীবী কাজী নজীবুল্লাহ হিরুকে বলতে শোনা গেছে, ‘জালিয়াতি ও প্রতারণার ইতিহাস থাকলে আশিয়ান সিটির আছে। পানির মধ্যে অন্যের জমিকে নিজেদের জমি দাবি করে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধেই। আশিয়ান সিটির নাম শুনলেই মানুষ প্রতারক হিসেবে চিহ্নিত করে। তাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলা চলমান। আজ তারা এসেছে একজন নীরিহ, সৎ সম্পাদক ও স্বনামখ্যাত ব্যবসায়ী নেতার বিরুদ্ধে ‘জালিয়াতি’র অভিযোগ নিয়ে। অথচ মামলার এজাহারে কোথাও তার নাম-গন্ধও নেই।’
গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশান-২-এর অফিস থেকে ভোরের পাতা সম্পাদককে গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি দল। পরবর্তিতে গতকাল বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোশাররফ হোসেনের আদালতে তোলা হয় তাকে। শুনানি শেষে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। আদালত সূত্রে জানা যায়, এজাহারে না থাকলেও মামলাটির অধিকতর তদন্তের স্বার্থেই এই রিমান্ড দেওয়া হয়েছে। আলোচিত আশিয়ানের মামলার এজহারভূক্ত মূল আসামীরা হলেন, নর্দার্ন ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু ইউসুফ, রিয়াজুল আলম ও সেলিম মুন্সী। এর আগে ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহ ও রিয়াজুল আলম নামে আরেকজনকে গ্রেফতার করেছিল পিবিআই।
ড. কাজী এরতেজা হাসান ভোরের পাতা গ্রুপ অব কোম্পানিজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। দৈনিক ভোরের পাতা ও ডেইলি পিপলস টাইমসের সম্পাদক ও প্রকাশক। এছাড়া দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআই-এর একজন নির্বাচিত পরিচালক এবং একজন সিআইপি। সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। কারওয়ান বাজারস্থ নর্দান ইউনিভার্সিটি ভবনেই তার সম্পাদিত ভোরের পাতা ও পিপলস টাইমের কার্যালয়।
জানা যায়, আশিয়ানের সঙ্গে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্দান ইউনিভার্সিটিরি জমি নিয়ে বিরোধ চলছে বেশ কয়েক বছর ধরে। ভোরের পাতা ও পিপলস টাইমস পত্রিকার কার্যালয়ের ভবনেই নর্দান ইউনিভাসিটিরি ক্যাম্পাস ছিল। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি রাজধানীর খিলক্ষেত থানায় মামলাটি করেন আশিয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের ভাই সাইফুল ইসলাম ভুঁইয়া। তিনি আশিয়ান ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্টসের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি)।
মামলায় নর্দার্ন ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস তৈরির জন্য আশিয়ান গ্রুপের কাছ থেকে পাঁচ বিঘা জমি কিনে চুক্তি অনুযায়ী টাকা না দেওয়া এবং জালিয়াতি করে জমি নিবন্ধনের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় অধ্যাপক আবু ইউসুফসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৫/৬ জনকে আসামি করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আশিয়ান গ্রুপ ও নর্দার্ন ইউনিভার্সিটির মধ্যে পাঁচ বিঘার একটি জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব বেশ কিছুদিন ধরে চলছে। আশিয়ান গ্রুপ জমি বিক্রি বাবদ বিশ্ববিদ্যালয়টির কাছে আরও ২০ কোটি টাকা চায়। আর নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি চুক্তি জাল করে অতিরিক্ত টাকা দাবির অভিযোগ আনে। এ নিয়ে দুই পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগে দুটি মামলা করেছে। অথচ এ বিরোধের মধ্যে কাজী এরতেজা হাসানের কোন ভূমিকাই নেই। আশিয়ানের মামলার পর গত বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি। সেই মামলায় জালিয়াতি করে চুক্তিপত্র বানিয়ে অতিরিক্ত ২০ কোটি টাকা দাবি করার অভিযোগ তোলা হয়।
ওই মামলায় গত ১৫ ডিসেম্বর আশিয়ান গ্রুপের এমডি নজরুল ইসলাম ভুঁইয়াসহ পাঁচ আসামিকে গ্রেফতারে পরোয়ানা জারি করে ঢাকার হাকিম আদালত। তবে পরে তারা জামিন নেন।
আশিয়ানের মামলার এজাহারে দাবি করা হয়, ২০১৩ সালে কাজী শামীম মেহেদি নামে একজন মধ্যস্থকারীর মাধ্যমে আশিয়ান গ্রুপের কাছে জমি কেনার জন্য যান নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু ইউসুফ। ওই বছর ৩ অগাস্ট আশিয়ান গ্রুপের সঙ্গে ৫০ কোটি টাকায় পাঁচ বিঘা জমি কেনার জন্য চুক্তি করে নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি। এরপর তারা নগদ ও চেকের মাধ্যমে ৩০ কোটি টাকা পরিশোধ করে। বাকি টাকা ওই বছর পরিশোধের কথা থাকলেও তারা পরিশোধ করেনি। পুরো টাকা পরিশোধ না করেই তারা জমিতে স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু করেন।
মামলায় আরও বলা হয়, এরপর ২০১৯ সালে আশিয়ান গ্রুপ পাওনা টাকা চাইতে গেলে নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি জানায়, ২০১৩ সালেই নজরুল ইসলাম ভুঁইয়া তাদের জমি নিবন্ধন করে দিয়েছেন। আর আশিয়ানের অভিযোগ, স্বাক্ষর জাল করে সম্পূর্ণ বেআইনি প্রক্রিয়ায় ওই সময় জমির রেজিস্ট্রি নেয় নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি।