ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এবং বোরাক রিয়েল এস্টেট লি: হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ অনুযায়ী সমঝোতার ভিত্তিতে শেয়ার বন্টনের চুক্তি স্বাক্ষর করে ডিএনসিসি ইউনিক কমপ্লেক্সের’ (হোটেল শেরাটন) অংশিদারিত্ব বুঝে নিয়েছে দুই পক্ষ। হোটেল শেরাটন বাণিজ্যিকভাবে পূর্ণাঙ্গরূপে চালু হতে আর কোনো বাঁধা নেই।
গত সোমবার ১৩ নভেম্বর ডিএনসিসি কার্যালয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম ও বোরাক রিয়েল এস্টেটের পক্ষে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহা. নূর আলী সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তি অনুযায়ী ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন তার ন্যায্য হিস্য বুঝে নিয়েছে। অন্যদিকে বোরাক রিয়েল এস্টেটও নিজ অংশ বুঝে পেয়ে হোটেল শেরাটনের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু করেছে।
আদালতের নির্দেশ মোতাবেক বনানী ডিসিসি-ইউনিক কমপ্লেক্স এর ২০ তলা বা ২০১ ফুট পর্যন্ত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও বোরাক রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের অংশ বুঝে নিয়ে এই চুক্তি হয়। গত ৯ অক্টোবর দুই পক্ষের উপস্থিতিতে আদালত বিষয়টির নিষ্পত্তির আদেশ দেন। সেই আদেশে বলা হয়েছে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ভবনটির ২০১ ফুট উচ্চতা অনুমোদন হয়েছে। তারপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বিভাগ ভবনের ২১ তলা থেকে ২৮ তলা পর্যন্ত স্থিতাবস্থার আদেশ দেয় এবং ইতোপূর্বে ২০২৩ সালের ১২ জুন এবং ২৯ আগস্টে দেওয়া আদেশ প্রতিপালন পূর্বক শেয়ার স্পেস বুঝে নিয়ে চুক্তি সম্পাদন করতে হাইকোর্ট বিভাগ নির্দেশ প্রদান করে। সেই আদেশের ভিত্তিতেই এই শেয়ার বন্টন চুক্তি সম্পন্ন হয়।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ দীর্ঘ শুনানির পর গত ৯ অক্টোবর এ আদেশ দেন।
আদালতে বোরাক রিয়েল এস্টেটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সাবেক বিচারপতি এবিএম আলতাফ হোসেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. আবু তালেব, শেখ মোসফেক কবির, আবুল কাশেম ও এনামুল হক তুহিন। অপরদিকে ডিএনসিসি’র পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম নীলিম। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউকের (রাজউক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ইমাম হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুদ্দিন খালেদ।
উল্লেখ্য, ২৮ তলা পর্যন্ত ভবনের উচ্চতার ক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাঁধা নেই; কারণ তেজগাঁও বিমানবন্দরের উড্ডয়ন কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় ২০০৯ সাল পর্যন্ত বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বনানী এলাকায় উচ্চতার কোনো উর্ধ্বসীমা নির্ধারিত ছিল না, এর পূর্বেই হোটেল শেরাটনের ২৮ তলা ভবনটি নির্মিত হয়। ২৮ তলা ভবনটি ২০১৪ সালের মধ্যেই নির্মাণ সম্পন্ন হয়। এমতাবস্থায় কোনো অবস্থানেই বর্তমান উচ্চতার উর্ধ্বসীমা আলোচ্য ভবনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। পরবর্তীতে ২০১ ফুটের উর্ধ্ব থেকে ২৮ তলা পর্যন্ত উচ্চতার বিষয়টি আদালতে নিষ্পত্তি হওয়া সাপেক্ষে উক্ত ফ্লোর সমূহের হিস্যা বন্টনের বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
বহুতল এই ভবনটি নির্মাণের পর বোরাক রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের পক্ষ থেকে স্পেস বন্টন সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা ডিএনসিসিকে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সেই প্রস্তাবনা ডিএনসিসির করপোরেশন সভায় উপস্থাপন করে সংস্থাটির প্রকৌশল বিভাগ। করপোরেশন সভার আলোকে ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর এবং ২০২৩ সালের ৭ জানুয়ারি ডিএনসিসির দ্বিতীয় পরিষদের ১৮ ও ১৯ তম সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক বোরাক রিয়েল এস্টেট কর্তৃক পেশকৃত প্রস্তাবনা অনুযায়ী ডিএনসিসি বর্ধিত ১৫ তলা থেকে ২৮ তলা পর্যন্ত ভবনের ৩০ শতাংশের পরিবর্তে ৪০ শতাংশ হিস্যা লাভ করবে। আর নকশা অনুসারে ১৪ তলা পর্যন্ত চুক্তি অনুযায়ী ডিএনসিসি পাবে ৩০ শতাংশ বোরাক রিয়েল এস্টেট পাবে ৭০ শতাংশ। এবং ১৫ থেকে ২৮ তলা পর্যন্ত ডিএনসিসি পাবে ৪০ শতাংশ আর বোরাক পাবে ৬০ শতাংশ।
এর আগে ২০০৭ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বুয়েট কর্তৃক ৩০ তলার স্ট্রাকচারাল নকশা ভেটিংসাপেক্ষে একই বছরের ২৫ জুন ঢাকা সিটি করপোরেশনের তৎকালীন অথরাইজড অফিসার (প্রধান প্রকৌশলী) কর্তৃক ৩০ তলা ভবনের নকশা অনুমোদন দেওয়া হয়।
এরপূর্বে ২০০৭ সালেই সিটি করপোরেশন কর্তৃক বিভিন্ন সংস্থা থেকে ৩০ তলার ছাড়পত্র গ্রহণ করা হয় (সিটি করপোরেশন, ডিএমপি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, তিতাস, পরিবেশ অধিদপ্তর, ডেসকো, ঢাকা ওয়াসা প্রভৃতি)। বুয়েটের ভেটিংয়ের পর বিধি অনুযায়ী প্রযোজ্য সকল সংস্থার অনাপত্তি প্রাপ্তি সাপেক্ষে সিটি করপোরেশন কর্তৃক ৩০ তলা ভবনের নকশা অনুমোদনের পর ২৮ তলা ‘শেরাটন ভবন’টি নির্মিত হয়।
এরপর ২০১১ সালের ২৭ নভেম্বর ডিএনসিসির তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ১৫ থেকে ৩০ তলা ভবন নির্মাণের বিষয়টি মেয়র কর্তৃক অনুমোদন হয়েছে মর্মে উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার সচিবকে চিঠির মাধ্যমে অবহিত করেন। তৎকালীন মেয়র প্রয়াত আনিসুল হক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দুই পক্ষের মধ্যে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং বোরাক রিয়েল এস্টেটকে ২০১৫ সালের ৩১ মে লিখিতভাবে তা অবহিত করেন।
গত সোমবার সম্পাদিত চুক্তির ফলে হোটেল শেরাটন ভবনের ২০ তলা পর্যন্ত শেয়ার বন্টনের কার্যক্রম চূড়ান্ত হলো। ফলে হোটেল শেরাটন পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হতে যাচ্ছে। অন্যদিকে ডিএনসিসিও বুঝে নিয়েছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার সম্পদ ও বিপুল রাজস্ব আয়।