নিজের উপর হত্যার চেষ্টায় নির্মম নির্যাতন، হামলা ও খ্রিষ্টান বলে অপপ্রচার করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মুফতী মনিরুজ্জামান।
তিনি তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমি মুফতি মনিরুজ্জামান হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। দাওরা হাদীস শেষ করেছি সিলেটের ঐতিহ্যবাহী জামেয়া মাদানিয়া বিশ্বনাথ মাদরাসা থেকে। যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন, কুতবে আলম সৈয়দ হুসাইন্ আহামদ মাদানী রহ. এর খলীফা হযরত মাওলানা শায়েখ আশরাফ আলী বিশ্বনাথী রহ.। এবং ইফতা সমাপ্ত করেছি সিলেটের আরেক ঐতিহ্যবাহী দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া মাদানিয়া কাজিরবাজার থেকে। যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন, আমার উস্তাদে মুহতারাম, যুগশ্রেষ্ঠ আলেমে দ্বীন, বীর মুজাহিদ, আল্লামা প্রিন্সিপাল হাবীবুর রহমান রহ.। তাদের হাতেগড়া ছাত্র এবং তাদের তত্বাবধানেই দ্বীনের একজন নগন্য খাদেম হিসেবে গড়ে উঠেছি এবং তাদের চিন্তাচেতনার আলোকেই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বীদা ও বিশ্বাসকে লালন ও ধারণ করে এযাবত পর্যন্ত দেশে ও বিদেশে দ্বীনের খেদমতে নিয়োজিত আছি। আমি আমার উস্তাদ মুহতারামগণ ও আকাবির আসলাফদের নীতি-আদর্শ ও চিন্তা-চেতনা থেকে চুল পরিমাণ বিচ্যুতিকেও পছন্দ করিনি কখনো। আমি এই আদর্শের উপরেই শেষ নবীর উম্মত হিসাবে কালিমায়ে তাওহীদের সাথে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চাই। আমার দ্বারা দ্বীনের তিল পরিমাণ কোন ক্ষতি হোক, একজন মুমিন-মুসলমান হিসেবে আমি কখনো তা বরদাশত করতে তৈরী নই।
তিনি আরও বলেন, আমি দীর্ঘদিন যাবত গাজীপুর জেলার অন্তর্গত কালিয়াকৈর থানাধীন ৯নং মধ্যপাড়া ইউনিয়নের বিলাস বাবর এলাকায় নিজ প্রতিষ্ঠিত জামিয়া মুহাম্মাদিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও সংলগ্ন মসজিদের খতীব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছি। তিলতিল করে প্রত্যন্ত গ্রামের নিভৃত পল্লীতে দ্বীনী শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত পশ্চাদপদ জনপদের শিশুদের জন্য ছো্ট একটি টিনশেড মাদরাসা নির্মাণ করে দ্বীনী ইলম প্রচারে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছি। পাশাপাশি আমি ছাত্রজীবন থেকেই শেষ নবীর উম্মত ও ওয়ারিশ হিসেবে নিজের যিম্মাদারী মনে করে দাওয়াত ইলাল্লাহর কাজের সাথে নিজেকে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত রেখেছি। আল্লাহভোলা মানুষকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেওয়াই আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ও পরকালীন নাজাতের উসিলা মনে করি। আমি দেশে ও প্রবাসে থাকাকালীন সময়ে নিজের জানমাল, সবকিছু দ্বীনী দাওয়াত ও ইলমের মেহনতের পিছনে ব্যয় করেছি। নিজের সহায়-সম্পত্তি ও অর্থকড়ির পিছনে কখনো ছুটি নি। যার ফলে নিজে সহজ সরল ও সাদামাটা জীবনকেই বেছে নিয়েছি।
মুফতি মনিরুজ্জামান আরো বলেন, আপনারা নিশ্চয় অবগত আছেন,বিগত কয়েক বছর যাবত তাবলীগ জামাতের কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে বিবাদমান দুটি পক্ষ আলাদাভাবে দাওয়াতী কাজ করে আসছে। এরই অংশ হিসাবে টঙ্গী ইজতিমা ময়দানেও দুই পক্ষের উলামায়ে কেরামের তত্বাবধানে পৃথক বিশ্ব ইজতিমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এই প্রেক্ষাপটে আমি অধম নিজের যাচাই-বাছাই ও বুঝ থেকে তাবলীগের বিশ্ব মারকায দিল্লীর নিযামুদ্দীনের অধীনে হযরতজ্বী শায়খুল হাদীস মাওলানা সা’দ কান্ধলভী হাফিযাহুল্লাহকে আমীর মেনে ইমারতভিত্তিক দাওয়াতী কাজের সাথে নিজেকে জড়িত রেখেছি। বাংলাদেশে ব্যপকভাবে কিছু আলেম তাবলীগের বিশ্বআমীর মাওলানা সা’দ কান্ধলভীর অনুসারীদেরকে হত্যাসহ তাদের কার্যক্রমে নানাবিধ বাধা সৃষ্টি করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘদিন যাবত স্থানীয় ইমাম সমিতির নেতাদের তত্বাবধানে আশপাশের কিছু ইমাম ও স্থানীয় কতিপয় আলেম আমাকে নানানভাবে হুমকি-ধমকি ও শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করে আসছিলো।
তিনি আরো বলেন, আমি ধৈর্য ও সবরের সাথে সবকিছু বরদাশত করে তাবলীগ জামাতের সাথে দাওয়াতী কাজ অব্যাহত রেখেছি। এটি তারা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিল না। তাদের একটিই দাবী ছিলো যে, আমি যেন জুবায়েরপন্থীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে এখানে অবস্থান করি। অন্যথায় তারা আমার প্রতিষ্ঠান মসজিদ ও মাদরাসা থেকে আমাকে বিতাড়িত করে, তা দখলের হুমকি দিয়ে আসছিলো। কিন্তু আমি জীবনের বিনিময়েও আদর্শ ও আমীরের আনুগত্য ত্যগ করতে রাজি না হওয়ার কথা জানালে তারা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে গত ২৫শে জুলাই রোজ মঙ্গলবার সকাল ৮ঘটিকায় পাঁচশতাধিক মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক মিলে আমার কর্মস্থল ঘেরাও করে হত্যা করার উদ্দেশ্যে আমার উপর অতর্কিত আক্রমণ করে। যা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সারা দুনিয়া প্রত্যক্ষ করেছে। তারা আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে নির্মম নির্যাতনের একপর্যায়ে আমাকে ও আমার ৬বছর বয়সী নিষ্পাপ শিশুপুত্র উমর ফারুককে অপহরণ করার চেষ্টা করে। কিন্তু ততক্ষণে আমার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গাজীপুরস্থ শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা নেওয়া অবস্থায় নির্যাতনের আলামত নষ্ট করার উদ্দেশ্যে সাংবাদিক পরিচয়দানকারী কতিপয় ভুয়া ইউটিউবারের যোগসাজশে আমাকে খৃষ্টান ও ছদ্মবেশি ইমাম আখ্যা দিয়ে পূণরায় আটক করে ইউনিয়ন অফিসে নিয়ে গিয়ে মারধর করে এবং শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত ও নাজেহাল করে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে খ্রিষ্টান অপবাদ দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এতে করে সারাদেশে আমার ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হয় এবং আমার ও আমার পরিবারের জীবন চরম নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে।
‘আমি একটি ঐতিহ্যবাহী ধার্মিক পরিবারের সন্তান। আমার নানা শাহ আবদুল মান্নান শায়েখে গুণই রহ. হলেন দারুল উলূম দেওবন্দের সদরুল মুদাররিসীন, শায়খুল ইসলাম সৈয়দ হুসাইন্ আহমাদ মাদানী রহ. এর একজন বিশিষ্ট খলীফা। এছাড়াও আমার নানা ও দাদা বংশে অসংখ্য উলামায়ে কেরাম ও পীর মাশায়েখ রয়েছেন। আমার সহপাঠীদের মধ্যে দেশ-বিদেশে অনেক সুপ্রতিষ্ঠিত উলামায়ে কেরাম রয়েছেন। আপনারা লক্ষ্য করেছেন, যারা বিগত দুদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার পক্ষে ও এই কুচক্রী মহলের ঘৃণীত ও নিন্দনীয় এই অপপ্রচারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করে আসছেন।’
‘আমি আপনাদের মাধ্যমে এই নির্মম নির্যাতন, অন্যায়, যুলুম ও ঘৃণীত অপপ্রচার এবং নির্লজ্জ ষড়যন্ত্রের সুষ্ঠ তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি। আমি চাই, আর কেউ যেন আমার মত এধরণের ষড়যন্ত্র ও নির্যাতনের শিকার না হন। আপনারা জানেন, গতকাল ২৬শে জুলাই ঢাকার নিউ মার্কেট এলাকায় তাবলীগের মূলধারার আরেক সাথীকে এই জুবায়েরপন্থীরাই নির্মমভাবে হত্যা করে। আমিও আমার জীবন নিয়ে চরম শঙ্কা ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবে সংবিধানের আলোকে স্বাধীনভাবে আমার ধর্মীয় কাজ ও স্বাভাবিক চলাফেলা করার অধিকার রাখি।কারো সাথে আমার ধর্মীয় বিষয়ে ভিন্নমত থাকতে পারে। কিন্তু এ বিষয়কে কেন্দ্র করে আমাকে যেভাবে খৃষ্টান অপবাদ দিয়ে দেশব্যপী নিরাপত্তাহীনতার যে উত্তপ্ত পরিবেশ তৈরী হয়েছে তাতে যেকোন সময় জীবনশঙ্কায় পতিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি আমি জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরী ও হত্যাচেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে থানায় ও কোর্টে যাওয়ার মত নিরাপত্তাও অনুভব করছি না।’
এমন পরিস্থিতিতে আমি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের সরাসরি হস্তক্ষেপ ও দৃষ্টি আকর্ষণ করার পাশাপাশি দেশের মানবাধিকার সংস্থাসমূহ ও মিডিয়াকর্মীদের সহযোগিতা কামনা করছি।